হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (HRM) কাকে বলে জানতে চান? এই আর্টিকেলে আমি এইচআরএম-এর সংজ্ঞা, প্রধান কাজ, লক্ষ্য, গুরুত্ব এবং আধুনিক ব্যবসায় এর ভূমিকা নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কখনও ভেবে দেখেছেন, একটি কোম্পানি কীভাবে ঠিক করে কাকে চাকরি দেবে? অথবা, কর্মীরা মাস শেষে কীভাবে সঠিক সময়ে বেতন পান? কিংবা ধরুন, অফিসে আপনার কোনো সমস্যা হলে আপনি কার কাছে যান? এই সবকিছুর পেছনেই যে বিভাগটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে, সেটি হলো হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Human Resource Management) বা এইচআরএম (HRM)। অনেকেই এইচআর (HR) বিভাগকে শুধু ‘নিয়োগ’ আর ‘ছাঁটাই’-এর বিভাগ বলে মনে করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, এই ধারণাটি একেবারেই পুরনো।
সহজ কথায়, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট হলো একটি প্রতিষ্ঠানের সেই প্রক্রিয়া, যা তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। অর্থাৎ তার কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করে। এটি কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা (নিয়োগ), তাদের দক্ষতা বাড়ানো (প্রশিক্ষণ), তাদের ধরে রাখা এবং তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করে। এই আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে। এর প্রধান কাজগুলো কী এবং কেন একটি ছোট স্টার্টআপ থেকে শুরু করে একটি বিশাল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সাফল্যও এই একটি বিভাগের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। চলুন, শুরু করা যাক।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (HRM) বলতে কী বোঝায়?
যখন আমি প্রথম এইচআরএম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি, তখন এটিকে কেবল ‘পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট’ (Personnel Management) বা কর্মী প্রশাসন বলে মনে হতো। যার মূল কাজ ছিল ফাইলপত্র সামলানো, ছুটির হিসাব রাখা, আর বেতন দেওয়া। কিন্তু আধুনিক হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (HRM) এই গণ্ডির চেয়ে অনেক বড়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বলতে গেলে, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট হলো একটি স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্য পূরণের জন্য কর্মীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সুস্থতাকে (well-being) একটি সমন্বিত উপায়ে কাজে লাগায়।
একটু ভেঙে বলি। এইচআরএম শুধু কর্মীদের পরিচালনা করে না। এটি নিশ্চিত করে যে ‘সঠিক পদের জন্য সঠিক কর্মী’ (Right Person for the Right Job) নিয়োগ পাচ্ছে এবং সেই কর্মী প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর এমন একটি পরিবেশ পাচ্ছে। যেখানে তিনি তার সেরাটা দিতে পারেন। এটি একটি প্রতিষ্ঠানের ‘মানুষ’ সম্পর্কিত সবকিছুর স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রধান কাজ ও কার্যাবলী

আমার অভিজ্ঞতায়, এইচআরএম-এর কাজগুলো একটি গাছের শিকড়ের মতো। যা পুরো প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন দিক থেকে সজীব ও শক্তিশালী রাখে। যদিও প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী কাজের ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে মূল কাজগুলো সবখানেই প্রায় এক। চলুন, এর প্রধান কাজগুলো এক এক করে দেখি:
১. নিয়োগ ও নির্বাচন (Recruitment and Selection)
এটি হলো এইচআরএম-এর প্রথম এবং সবচেয়ে পরিচিত কাজ। ভাবুন তো, একটি ফুটবল টিমের জন্য যদি ভুল খেলোয়াড় বাছা হয়, তবে কি টিম জিতবে? ঠিক তেমনি, একটি কোম্পানির জন্যও সঠিক মানুষটি খুঁজে বের করা এইচআরএম-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
এর মধ্যে রয়েছে:
-
কোম্পানির ঠিক কী ধরনের কর্মী প্রয়োজন তা ঠিক করা (Job Analysis)।
-
চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া।
-
আবেদনপত্র বাছাই করা (Screening)।
-
ইন্টারভিউ নেওয়া এবং পরীক্ষা করা।
-
সবশেষে, সেরা প্রার্থীকে নির্বাচন করা এবং তাকে অফার লেটার দেওয়া।
২. প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন (Training and Development)
সঠিক কর্মীকে নিয়োগ দিলেই কাজ শেষ নয়। তাকে তো সময়ের সাথে সাথে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে! এখানেই আসে প্রশিক্ষণ।
-
ট্রেনিং (Training): কর্মীকে তার বর্তমান কাজটি আরও ভালোভাবে করার জন্য যে দক্ষতা দরকার, তা শেখানো। যেমন: নতুন একটি সফটওয়্যার শেখানো।
-
ডেভেলপমেন্ট (Development): কর্মীকে ভবিষ্যতের বড় কোনো ভূমিকার জন্য প্রস্তুত করা। যেমন: তাকে লিডারশিপ বা ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া।
আমার মতে, যে কোম্পানি কর্মীদের শেখার ওপর যত বেশি বিনিয়োগ করে, সেই কোম্পানির কর্মীরা তত বেশি সন্তুষ্ট থাকে এবং কোম্পানি ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।
৩. পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট ও মূল্যায়ন (Performance Management)
আমরা সবাই জানতে চাই আমরা কেমন কাজ করছি, তাই না? পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট ঠিক এই কাজটিই করে।
এটি শুধু বছরের শেষে ‘ভালো’ বা ‘খারাপ’ গ্রেড দেওয়া নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে:
-
কর্মীর কাজের লক্ষ্য (Target) ঠিক করা হয়।
-
ম্যানেজার নিয়মিত কাজের বিষয়ে ফিডব্যাক দেন।
-
বছরের শেষে বা নির্দিষ্ট সময় পর কাজের মূল্যায়ন (Appraisal) করা হয়।
এই মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করেই কর্মীর বেতন বৃদ্ধি, প্রোমোশন বা বোনাস নির্ভর করে।
৪. বেতন, ভাতা ও সুবিধাদি (Compensation and Benefits)
কর্মীরা কেন আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে? অবশ্যই একটি ভালো প্যাকেজের জন্য। এইচআরএম-এর দায়িত্ব হলো একটি ন্যায্য এবং আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো তৈরি করা।
এর মধ্যে শুধু মাসিক বেতনই (Salary) নয়, আরও অনেক কিছু থাকে। যেমন:
| সুবিধা (Benefits) | ধরণ |
| আর্থিক (Financial) | প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বাৎসরিক বোনাস, প্রফিট শেয়ারিং। |
| অ-আর্থিক (Non-Financial) | স্বাস্থ্য বীমা (Health Insurance), জীবন বীমা, ছুটির সুবিধা (Annual Leave), লাঞ্চ। |
| সুযোগ (Perks) | কোম্পানির গাড়ি, জিম মেম্বারশিপ, বাচ্চার ডে-কেয়ার সুবিধা। |
একটি ভালো ‘কম্পেনসেশন অ্যান্ড বেনিফিট’ প্যাকেজ সেরা কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে টেনে আনতে এবং ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫. এমপ্লয়ি রিলেশনস ও ওয়েলফেয়ার (Employee Relations & Welfare)
আমার কাছে, এটিই এইচআরএম-এর ‘আত্মা’। অফিসে আপনার মন ভালো নেই, ম্যানেজারের সাথে কোনো বিষয়ে মতের অমিল হচ্ছে, বা আপনি কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন আপনি কার কাছে যাবেন? এইচআর (HR) বিভাগের কাছে। একটি সুস্থ, ইতিবাচক এবং সহযোগিতামূলক কর্মপরিবেশ (Positive Work Environment) নিশ্চিত করা এইচআরএম-এর প্রধান দায়িত্ব। এর মধ্যে কর্মীদের অভিযোগ শোনা (Grievance Handling), তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া, এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—এই সবই অন্তর্ভুক্ত।
৬. আইন ও কমপ্লায়েন্স (Legal Compliance)
এটি একটি জটিল কিন্তু খুবই জরুরি কাজ। প্রতিটি দেশের নিজস্ব শ্রম আইন আছে (যেমন বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’)। কর্মীরা কত ঘণ্টা কাজ করবে, তাদের ছুটির নিয়ম কী, ন্যূনতম মজুরি কত, মাতৃত্বকালীন ছুটি (Maternity Leave) কীভাবে পরিচালিত হবে—এই সব আইনকানুন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হয় এইচআরএম-কে। এখানে সামান্য একটি ভুলের জন্য কোম্পানির বড় ধরনের জরিমানা বা আইনি জটিলতা হতে পারে। তাই এই বিষয়ে এইচআর বিভাগকে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়।
এইচআরএম (HRM) এর লক্ষ্য ও গুরুত্ব

আগের দিনের পার্সোনেল ম্যানেজমেন্টের লক্ষ্য ছিল শুধু ‘প্রশাসন’ চালানো। কিন্তু আধুনিক এইচআরএম-এর লক্ষ্য আরও অনেক বড়। এটি এখন কোম্পানির টেবিলে বসে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়, তাই একে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার’ বলা হয়।
এইচআরএম-এর প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ (Objectives)
-
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন: কোম্পানির যা মূল লক্ষ্য (যেমন: বেশি বিক্রি করা, সেরা সেবা দেওয়া) তা অর্জনে কর্মীদের মাধ্যমে সরাসরি সাহায্য করা।
-
সেরা কর্মীদের ধরে রাখা (Talent Retention): এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমার অভিজ্ঞতা বলে, কর্মীরা শুধু টাকার জন্য কোম্পানি ছাড়ে না; তারা বাজে ম্যানেজমেন্ট, খারাপ কাজের পরিবেশ বা শেখার সুযোগ না থাকার কারণেও চলে যায়। এইচআরএম এই বিষয়গুলোতেই কাজ করে।
-
কর্মীদের সন্তুষ্টি ও প্রণোদনা: কর্মীরা খুশি থাকলে গ্রাহকরাও খুশি থাকে। এইচআরএম কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত (Motivated) রাখে।
-
প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি (Company Culture) তৈরি: একটি ভালো কাজের পরিবেশ (যেমন: সবাই সবাইকে সম্মান করে, একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসে) তৈরি করা এবং তা লালন করা।
ব্যবসায়িক সাফল্যে এইচআরএম-এর গুরুত্ব
আজকের দিনে, আপনার প্রতিযোগী যে পণ্য বা সেবা দিচ্ছে, আপনিও হয়তো সেটাই দিচ্ছেন। তাহলে আপনি কীভাবে এগিয়ে থাকবেন?
উত্তর হলো: আপনার মানুষ দিয়ে।
এইচআরএম-এর গুরুত্ব এখানেই।
-
প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা (Competitive Advantage): আপনার কর্মীরা যদি আপনার প্রতিযোগীর কর্মীদের চেয়ে বেশি দক্ষ, বেশি উদ্যমী এবং বেশি আন্তরিক হয়, তবে আপনিই বাজারে জিতবেন। এইচআরএম এই পার্থক্যটি গড়ে দেয়।
-
পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা (Change Management): যখন কোম্পানিতে কোনো বড় পরিবর্তন আসে (যেমন: নতুন প্রযুক্তি, নতুন মালিকানা), তখন কর্মীরা 불안তায় ভোগে। এইচআরএম এই পরিবর্তনের সময় কর্মীদের পাশে থেকে তাদের সঠিকভাবে গাইড করে।
-
ঝুঁকি কমানো: আগেই বলেছি, আইনগত ঝুঁকি বা কর্মী অসন্তোষের (Employee Unrest) মতো বড় বিপদ থেকে এইচআরএম কোম্পানিকে বাঁচায়, যা কোম্পানির সুনাম ও অর্থ দুটোই রক্ষা করে।
আধুনিক হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (Modern HRM): চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
এইচআরএম কিন্তু এক জায়গায় থেমে নেই। যুগ পাল্টাচ্ছে, এইচআরএম-এর ধরণও আমূল পাল্টাচ্ছে।
-
প্রযুক্তির প্রভাব (AI in HR): এখন আর আগের মতো গাদা গাদা ফাইলপত্র ঘাঁটতে হয় না। এইচআরআইএস (HRIS) সফটওয়্যার দিয়ে ছুটির আবেদন, বেতন, পারফরম্যান্স মূল্যায়ন—সবকিছু এক ক্লিকে হয়ে যাচ্ছে। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে এখন হাজার হাজার সিভি থেকে সেরা প্রার্থীকে খুঁজে বের করা হচ্ছে।
-
রিমোট ওয়ার্ক (Remote Work): বিশেষ করে কোভিডের পর থেকে ‘বাড়ি থেকে কাজ’ বা ‘হাইব্রিড মডেল’ (কখনও অফিস, কখনও বাড়ি) খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে। এই দূরে থাকা কর্মীদের ম্যানেজ করা, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের কাজের মান ঠিক রাখা—এটা আধুনিক এইচআরএম-এর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ।
-
DEI (Diversity, Equity & Inclusion): অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠানে যেন সব ধরনের মানুষ (নারী-পুরুষ, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন অঞ্চল, ভিন্ন শারীরিক সক্ষমতা) সমান সুযোগ ও সম্মান পায়, তা নিশ্চিত করা। আমার বিশ্বাস, একটি বৈচিত্র্যময় টিম সব সময় ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এইচআরএম নিয়ে আমি প্রায়ই কিছু সাধারণ প্রশ্নের মুখোমুখি হই। সেগুলোর উত্তর এখানে দেওয়ার চেষ্টা করছি:
প্রশ্ন: এইচআর (HR) এবং এইচআরএম (HRM) এর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: খুব ভালো প্রশ্ন! সহজভাবে বললে, ‘এইচআর’ (HR) বলতে সাধারণত প্রতিদিনের কাজগুলোকে (যেমন: নিয়োগ দেওয়া, বেতন দেওয়া, ফাইল মেইনটেইন করা) বোঝায়। এগুলো বেশি অপারেশনাল বা প্রশাসনিক কাজ। আর ‘এইচআরএম’ (HRM) হলো একটি বড় ধারণা বা ‘স্ট্র্যাটেজি’—কীভাবে এই মানুষগুলোকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণ করা হবে, সেই পরিকল্পনা। এইচআরএম হলো ‘কেন’ (Why) এবং এইচআর হলো সেই ‘কেন’-কে বাস্তবায়ন করার ‘কীভাবে’ (How)।
প্রশ্ন: এইচআরএম কি শুধু বড় কোম্পানিগুলোর জন্য?
উত্তর: একদমই না! আমার অভিজ্ঞতা বলে, আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি মাত্র একজন কর্মীও থাকে, তারও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। হয়তো ছোট কোম্পানিতে (যেমন একটি স্টার্টআপে) একজন ‘ডেডিকেটেড’ এইচআর ম্যানেজার থাকেন না, কোম্পানির মালিক বা সিইও নিজেই সেই কাজগুলো করেন। কিন্তু কাজগুলো (যেমন: তাকে সময়মতো বেতন দেওয়া, তার ছুটির হিসাব রাখা, তাকে কাজের বিষয়ে গাইড করা) ঠিকই করতে হয়।
প্রশ্ন: কীভাবে এইচআরএম-এ ক্যারিয়ার শুরু করা যায়?
উত্তর: সাধারণত বিবিএ (BBA) বা এমবিএ (MBA) তে এইচআরএম-এর ওপর মেজর বা স্পেশালাইজেশন করে এই পথে আসা যায়। তবে আজকাল সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান বা অন্য বিষয়ে পড়েও অনেকে প্রফেশনাল ডিপ্লোমা (যেমন PGDHRM) করে সফলভাবে এই পেশায় আসছেন। আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে, শুধু বইয়ের পড়ার ওপর নির্ভর না করে, ভালো কমিউনিকেশন স্কিল (যোগাযোগের দক্ষতা), মানুষের সাথে মেশার মানসিকতা এবং অন্যের সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শোনার ধৈর্য তৈরি করুন। কারণ দিন শেষে, এইচআরএম হলো ‘মানুষ’ নিয়ে কাজ।
আমার শেষ কথা
তাহলে, পুরো আলোচনার পর আমরা ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে’এর উত্তরে কী বুঝলাম? এটি একটি প্রতিষ্ঠানের সেই বিভাগ যা তার কর্মীদের নিয়োগ থেকে শুরু করে অবসর পর্যন্ত পুরো যাত্রার (Employee Life Cycle) দেখভাল করে। তবে আমার কাছে, এইচআরএম-এর সংজ্ঞা আরও গভীর। মনে রাখবেন, একটি প্রতিষ্ঠান ইট-পাথরের দালান দিয়ে চলে না, চলে মানুষ দিয়ে। আর সেই মানুষগুলোর যত্ন নেওয়ার, তাদের বিকশিত করার এবং তাদের মাধ্যমে অসাধ্য সাধন করার গুরুদায়িত্বটিই পালন করে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। এটি শুধু একটি ‘বিভাগ’ নয়, এটি একটি ‘দর্শন’ মানুষকে এবং মানবিকতাকে গুরুত্ব দেওয়ার দর্শন।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।