আপনার হাতে কি পুঁজি কম? কিন্তু নিজের মতো করে কিছু একটা শুরু করার অদম্য ইচ্ছা আছে? হয়তো আপনি চাকরির বেতনে সন্তুষ্ট নন, অথবা একজন ছাত্র হিসেবে নিজের খরচ চালাতে চান। কারণ যাই হোক না কেন, যদি আপনার উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তবে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্যই। আমি বিশ্বাস করি, সৎ পথে আয়ের চেয়ে সম্মানের আর কিছু নেই। হকারি ব্যবসা এমনই একটি পথ, যেখানে আপনি খুব অল্প বিনিয়োগে নিজের ‘বস’ নিজে হতে পারেন।
অনেকেই ‘হকারি’ বলতেই একটু অন্যভাবে দেখেন, কিন্তু আমি আপনাকে বলছি, ধারণা বদলানোর সময় এসেছে। এটি একটি স্বাধীন এবং লাভজনক পেশা। এই পোস্টে, আমি আমার অভিজ্ঞতা এবং বিশ্লেষণ থেকে সেরা ১০টি হকারি ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমি শুধু আইডিয়াই দেবো না, বরং এই ব্যবসাগুলো কীভাবে শুরু করবেন, কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে এবং কীভাবে সফল হবেন, তার বাস্তবসম্মত একটি চিত্রও তুলে ধরব। চলুন, শুরু করা যাক!
হকারি ব্যবসা কী এবং কেন এটি লাভজনক?
হকারি ব্যবসা কী?
খুব সহজ ভাষায় যদি বলি, হকারি ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল যেখানে আপনার কোনো স্থায়ী দোকানঘরের প্রয়োজন নেই। আপনি একটি ভ্যানে, ছোট টেবিলে বা এমনকি পায়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে আপনার পণ্য বা সেবা সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। ভাবুন, ফুটপাত, পার্কের মোড়, অফিস পাড়া, বাস স্ট্যান্ড। যেখানে মানুষের ভিড়, সেখানেই আপনার ব্যবসার সুযোগ।
কেন এটি এত লাভজনক?
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই ব্যবসার মডেলটি অসাধারণ, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের জন্য। এর পেছনের কারণগুলো দেখুন:
-
জিরো (বা প্রায়) দোকান ভাড়া: একটি ভালো লোকেশনে দোকান ভাড়া নিতে গেলে যে পরিমাণ অ্যাডভান্স আর মাসিক ভাড়া গুনতে হয়, তাতেই অনেকে ব্যবসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। হকারি ব্যবসায় এই বিশাল খরচটা নেই।
-
সরাসরি গ্রাহকের দরজায়: আপনাকে ক্রেতার জন্য বসে থাকতে হবে না। আপনি নিজেই ক্রেতার কাছে চলে যাচ্ছেন। যেখানে চাহিদা বেশি, আপনি সেখানেই আপনার পসরা সাজাতে পারেন।
-
নগদ টাকার খেলা: এই ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রায় পুরোটাই নগদ টাকায় লেনদেন হয়। দিনের শেষে লাভের টাকা আপনার হাতে। মূলধন ঘোরানো (Capital Rotation) খুব সহজ হয়, যা যেকোনো ব্যবসায় আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
-
নমনীয়তা: আজ এই এলাকায় ব্যবসা ভালো চলছে না? কাল অন্য এলাকায় চলে যান। সকালের বদলে বিকেলে সময় দিতে চান? সেটাও সম্ভব। এই স্বাধীনতা আপনাকে অন্য কোনো ব্যবসা সহজে দেবে না।
সেরা ১০টি লাভজনক হকারি ব্যবসা আইডিয়া
এখানে আমি এমন ১০টি আইডিয়া নিয়ে কথা বলব। যা আমি নিজে দেখেছি বা বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে এগুলোতে লাভ ভালো এবং শুরু করাও সহজ।
ভ্রাম্যমাণ চা/কফি ও হালকা নাস্তা
চা আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। সকালের অফিসে ঢোকার আগে এক কাপ গরম চা, বা বিকেলের আড্ডায় কফির কোনো তুলনা নেই।
-
কেন লাভজনক: অফিস পাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়, বাস স্ট্যান্ড বা যেকোনো জনবহুল মোড়ে এর চাহিদা কখনো শেষ হবে না।
-
কীভাবে শুরু করবেন: আপনার শুধু দরকার একটি ভালো ফ্লাস্ক (বা ছোট চুলাসহ ভ্যান), চা-কফির উপকরণ আর কিছু কাপ। সাথে রাখতে পারেন বিস্কুট, কেক বা কলা।
-
আমার টিপস: পরিচ্ছন্নতা হলো এই ব্যবসার এক নম্বর পুঁজি। আপনার হাত, কাপ এবং ভ্যান পরিষ্কার রাখুন। গ্রাহকের সাথে একটি হাসি বিনিময় করুন। দেখবেন, আপনার নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক তৈরি হয়ে গেছে, যারা প্রতিদিন আপনার কাছেই আসবে।
ফুচকা, চটপটি বা ঝালমুড়ি
বিশ্বাস করুন, এই আইটেমগুলোর আবেদন বাঙালির কাছে চিরন্তন। স্কুল-কলেজের গেট থেকে শুরু করে পার্ক বা আবাসিক এলাকার মোড়, সবখানেই এর ভক্ত আছে।
-
কেন লাভজনক: এই খাবারগুলোতে লাভের মার্জিন (Profit Margin) খুবই ভালো। অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং বিক্রিও প্রচুর।
-
প্রয়োজনীয় পুঁজি: একটি ছোট ভ্যান এবং রান্নার উপকরণ।
-
আমার টিপস: আপনার ব্যবসার আসল ‘হিরো’ হলো আপনার ‘টক’ বা ‘চাটনি’। যদি আপনার ফুচকার টক বা চটপটির মসলা অন্যদের চেয়ে আলাদা স্বাদের হয়, মানুষ শুধু সেটার টানেই আপনার কাছে ভিড় করবে। স্বাদের সাথে কখনো আপস করবেন না।
৩. মৌসুমী ফল ও ফলের জুস
মানুষ এখন স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। বিশেষ করে গরমের দিনে এক গ্লাস তাজা আখের রস, লেবুর শরবত বা মাল্টার জুসের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
-
কেন লাভজনক: গরমের মাসগুলোতে এটি একটি সুপারহিট ব্যবসা। আবার শীতকালে আপনি এই ভ্যানেই বিভিন্ন ধরনের ভর্তা (আমড়া, জলপাই) বিক্রি করতে পারেন।
-
কীভাবে শুরু করবেন: একটি জুস মেকার মেশিন (যেমন আখের রসের মেশিন) বা ব্লেন্ডার এবং তাজা ফল।
-
আমার টিপস: এখানে বিশ্বস্ততা (Trust) খুব জরুরি। গ্রাহককে দেখান যে আপনি পরিষ্কার পানি এবং তাজা ফল ব্যবহার করছেন। বরফের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। একবার বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে গ্রাহকের অভাব হবে না।
৪. মোবাইল এক্সেসরিজ ও গ্যাজেট
আজকাল মোবাইল ফোন নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আর ফোন থাকলেই তার এক্সেসরিজের দরকার হয়।
-
কেন লাভজনক: হেডফোন, চার্জার, ডেটা ক্যাবল, মোবাইলের কভার, এগুলো খুব ঘনঘন নষ্ট হয় বা মানুষ পরিবর্তন করে। তাই এর চাহিদা সবসময়ই থাকে।
-
স্থান: বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, প্রযুক্তি মার্কেট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে।
-
আমার টিপস: লাভের জন্য আপনাকে পাইকারি বাজার (যেমন ঢাকার মোতালেব প্লাজা বা গুলিস্তান) থেকে পণ্য কিনতে হবে। কম দামে ভালো মানের পণ্য দিতে পারলে আপনার বিক্রি নিশ্চিত।
৫. বাচ্চাদের খেলনা ও বেলুন
পার্কে বা মেলার সামনে ঘুরন্ত লাইটওয়ালা খেলনা বা হিলিয়াম বেলুন দেখে বায়না ধরে না এমন শিশু কমই আছে।
-
কেন লাভজনক: এই পণ্যগুলোর ক্রয়মূল্য খুব কম, কিন্তু বিক্রি হয় কয়েকগুণ লাভে। অভিভাবকরা সন্তানের হাসিমুখের জন্য এই অল্প টাকা খরচ করতে দ্বিধা করেন না।
-
পুঁজি: অবিশ্বাস্য রকমের কম পুঁজি দিয়ে শুরু করা যায়।
-
আমার টিপস: আকর্ষণীয় এবং কম দামি (যেমন ৫০-১০০ টাকার মধ্যে) খেলনা রাখুন। বিশেষ করে মেলা, পার্ক বা শিশু হাসপাতালের সামনে দাঁড়ালে বিক্রি ভালো হয়।
৬. মৌসুমী পোশাক (যেমন: শীতের পোশাক বা টি-শার্ট)
এটি একটি সময়োপযোগী ব্যবসা। যেমন, শীতের শুরুতে ফুটপাতে টুপি, মাফলার, মোজা বা সোয়েটারের দোকানগুলোয় কী পরিমাণ ভিড় থাকে তা আমরা সবাই জানি।
-
কেন লাভজনক: নির্দিষ্ট মৌসুমে চাহিদা তুঙ্গে থাকে। আবার গরমে আপনি একই জায়গায় টি-শার্ট বা গামছা বিক্রি করতে পারেন।
-
স্থান: জনবহুল ফুটপাত, বাজার বা শিল্প এলাকার গেট।
-
আমার টিপস: ট্রেন্ড বুঝতে হবে। এই শীতে কোন ধরনের টুপি চলছে, বা গরমে কোন ডিজাইনের টি-শার্টের চাহিদা বেশি—এই খোঁজটা রেখে পণ্য তুললে লাভবান হবেন।
৭. সকালের নাস্তা (ভাপা পিঠা, রুটি-ভাজি)
কর্মব্যস্ত জীবনে সকালে নাস্তা তৈরি করার সময় পান না এমন মানুষের সংখ্যা শহরে অগণিত। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল বা অফিস পাড়ায় এর চাহিদা ব্যাপক।
-
কেন লাভজনক: বিশেষ করে শীতের সকালে গরম ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা বা ডিম-রুটির চাহিদা থাকে অনেক।
-
স্থান: অফিস পাড়া, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির গেট বা বাস স্ট্যান্ড।
-
আমার টিপস: এই ব্যবসার মূলমন্ত্র হলো সময়। আপনাকে খুব ভোরে (সকাল ৬টা থেকে ৯টা) ব্যবসা করতে হবে। সময়মতো গরম খাবার পরিবেশন করতে পারলে আপনার কাস্টমার বাঁধা।
৮. সস্তায় প্রসাধনী ও গহনা (ইমিটেশন)
মেয়েদের সাজগোজের প্রতি আগ্রহ সবসময়ই। লিপস্টিক, কানের দুল, চুড়ি, হেয়ার ক্লিপ—এগুলো তাদের প্রতিদিনের প্রয়োজন।
-
কেন লাভজনক: কম দামি ইমিটেশন গহনা বা প্রসাধনীর চাহিদা প্রচুর, বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং তরুণীদের কাছে।
-
স্থান: লেডিস হোস্টেল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বা শপিং মলের সামনের ফুটপাত।
-
আমার টিপস: পণ্যের বৈচিত্র্য রাখুন। নতুন ডিজাইনের কানের দুল বা ট্রেন্ডি ক্লিপগুলো বেশি করে রাখুন।
৯. ফুল (তাজা বা প্লাস্টিক)
ফুল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। আমাদের দেশে বিভিন্ন দিবস (ভালোবাসা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ) পালিত হয় খুব আড়ম্বরের সাথে।
-
কেন লাভজনক: বিশেষ দিনগুলোতে কয়েক ঘণ্টায় পুরো মাসের আয় করা সম্ভব। এছাড়া ট্রাফিক সিগন্যালে ছোট ছোট ফুলের মালা বিক্রি করেও প্রতিদিন ভালো আয় হয়।
-
পুঁজি: খুব কম।
-
আমার টিপস: বিশেষ দিবসগুলোর আগে পাইকারি বাজার (যেমন: শাহবাগ) থেকে ফুল সংগ্রহ করুন।
১০. মাস্ক, স্যানিটাইজার ও টিস্যু পেপার
কোভিড-১৯ আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। এর পর থেকে মাস্ক, স্যানিটাইজার বা ওয়েট টিস্যুর চাহিদা আর আগের মতো নেই, এটি একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে গেছে।
-
কেন লাভজনক: বাস, হাসপাতাল বা পাবলিক প্লেসে এর চাহিদা রয়েছে।
-
স্থান: হাসপাতাল বা ক্লিনিকের গেট, বাস টার্মিনাল, জনবহুল মোড়।
-
আমার টিপস: বড় প্যাকের বদলে ছোট বা খুচরা পণ্য (যেমন: সিঙ্গেল মাস্ক, ছোট স্যানিটাইজার) বিক্রি করুন। কারণ মানুষ এগুলো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কেনে।
হকারি ব্যবসা শুরু করার গাইডলাইন (A to Z)
আইডিয়া তো পেলেন। কিন্তু শুরুটা করবেন কীভাবে? ভয় পাবেন না। আমি আপনাকে ধাপে ধাপে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
১. পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরি
প্রথমে ঠান্ডা মাথায় বসুন। ঠিক করুন কোন ব্যবসাটি আপনি করতে চান। এরপর ভাবুন, আপনার হাতে ঠিক কত টাকা আছে যা আপনি এই ব্যবসায় খাটাতে পারবেন? ৫,০০০? ১০,০০০? না ২০,০০০? বাজেট যাই হোক, পুরো টাকা দিয়ে পণ্য কিনবেন না। কিছু টাকা সবসময় হাতে রাখবেন বিপদের সময়ের জন্য।
২. সঠিক পণ্য ও স্থান নির্বাচন
এই দুটি বিষয় একে অপরের সাথে জড়িত। ধরুন, আপনি খেলনা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন আপনি যদি কোনো অফিস পাড়ায় বসেন, আপনার কি বিক্রি হবে? না। আপনাকে যেতে হবে পার্ক বা স্কুলের সামনে। তাই, আপনার পণ্য অনুযায়ী সঠিক স্থান নির্বাচন করাটা এই ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমি বলবো, কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখুন, কোথায় কোন পণ্যের চাহিদা বেশি তা বোঝার চেষ্টা করুন।
৩. পণ্য সংগ্রহ (সোর্সিং)
আপনার লাভ নির্ভর করবে আপনি কত কমে পণ্য কিনতে পারছেন তার উপর। খুচরা দোকান থেকে পণ্য কিনে হকারি করলে লাভ হবে না। আপনাকে যেতে হবে পাইকারি বাজারে। ঢাকার ক্ষেত্রে চকবাজার, গুলিস্তান, ইসলামপুর, মোতালেব প্লাজা হলো একেক ধরনের পণ্যের স্বর্গরাজ্য। প্রথমদিকে একটু কষ্ট করে এসব বাজার ঘুরে দেখুন, দাম যাচাই করুন, তারপর পণ্য কিনুন।
৪. আইনি বিষয় ও অনুমতি (গুরুত্বপূর্ণ)
এই বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো লুকোচুরি করব না। ফুটপাতে বা প্রকাশ্যে ব্যবসা করার কিছু আইনি জটিলতা থাকে। যদিও ছোট পরিসরে হকারদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো লাইসেন্স সিস্টেম নেই, তবে আপনাকে স্থানীয় কিছু নিয়ম মানতে হতে পারে। যেমন:
-
সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা: অনেক সময় পৌরসভা থেকে নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে বসার অনুমতি পাওয়া যায়।
-
স্থানীয় প্রভাব: আপনাকে স্থানীয় দোকানদার বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক রেখে চলতে হতে পারে।
-
পুলিশি হয়রানি: এটি একটি বাস্তবতা। তবে আপনি যদি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন এবং কারো চলাচলে অসুবিধা না করেন, তবে হয়রানি কম হয়।
আমার পরামর্শ হলো, যেখানে ব্যবসা শুরু করতে চান, সেখানকার অন্য হকারদের সাথে আগে কথা বলুন। নিয়মকানুন ও সুবিধা-অসুবিধাগুলো তাদের কাছ থেকে জেনে নিন।
হকারি ব্যবসায় সফলতার জন্য ৫টি বিশেষ টিপস
আমি অনেক সফল হকারকে দেখেছি। তাদের সবার মধ্যে কিছু মিল খুঁজে পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই এই টিপসগুলো দিচ্ছি:
১. সততা (Honesty): আপনার ব্যবসার মূলধন। পণ্যের গুণমান নিয়ে মিথ্যা বলবেন না। ওজনে কখনো কম দেবেন না। একবার যদি ক্রেতা আপনাকে বিশ্বাস করে, সে আপনার স্থায়ী গ্রাহক হয়ে যাবে।
২. মিষ্টি ব্যবহার (Good Behavior): আপনার হাসি এবং ভালো ব্যবহারই অর্ধেক বিক্রি করে দেয়। ক্রেতা আপনার পণ্য না কিনলেও হাসিমুখে কথা বলুন। “আসসালামু আলাইকুম, ভাই/আপা কেমন আছেন?”—এই ছোট কথাগুলো মানুষের মনে দারুণ প্রভাব ফেলে।
৩. পরিচ্ছন্নতা: আপনি খাবার, পানীয় বা যা-ই বিক্রি করুন না কেন, আপনার নিজের এবং আপনার ভ্যান বা দোকানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। অপরিচ্ছন্ন স্থান থেকে মানুষ কিছু কিনতে চায় না।
৪. সঠিক দাম (Competitive Pricing): লাভ অবশ্যই করবেন, তবে অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে ক্রেতা হারাবেন না। আপনার আশেপাশে অন্যরা কত দামে বিক্রি করছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখুন এবং সে অনুযায়ী লাভ রেখে দাম ঠিক করুন।
৫. ধারাবাহিকতা (Consistency): আজ বসলেন, কাল বসলেন না। এমনটা করলে ব্যবসা হবে না। আপনাকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এতে মানুষের মধ্যে একটা অভ্যাস তৈরি হয় যে, “ওখানে গেলে লোকটাকে পাওয়া যাবে।”
এই ব্যবসায় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ
আমি শুধু আপনাকে স্বপ্নই দেখাবো না, বাস্তবতার কঠিন দিকটাও তুলে ধরব। কারণ আমি চাই আপনি প্রস্তুতি নিয়ে নামুন।
-
আবহাওয়া: রোদ, বৃষ্টি, ঝড়। এই ব্যবসার সবচেয়ে বড় শত্রু। বৃষ্টির দিনে আপনার আয় প্রায় শূন্যে নেমে আসতে পারে। এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।
-
প্রতিযোগিতা: আপনি যেখানে ব্যবসা করবেন, সেখানে আপনার মতো আরও অনেকেই থাকতে পারে। আপনাকে আপনার ব্যবহার এবং পণ্যের মান দিয়ে তাদের সাথে পাল্লা দিতে হবে।
-
অস্থায়ীতা: যেকোনো সময় আপনাকে স্থান থেকে উচ্ছেদ করা হতে পারে বা বসা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এই অনিশ্চয়তা মেনে নিতে হবে।
-
শারীরিক পরিশ্রম: এটি একটি পরিশ্রমের কাজ। সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকা, মালামাল টানাটানি করা এগুলোতে অভ্যস্ত হতে হবে।
আমার শেষ কথা
তাহলে সবশেষে কী দাঁড়ালো? হকারি ব্যবসা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, কিন্তু একই সাথে এটি আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার এবং কম পুঁজিতে স্বাবলম্বী হওয়ার একটি অসাধারণ উপায়। আমি বিশ্বাস করি, লজ্জা বা ভয় না পেয়ে যদি আপনি সততা, পরিশ্রম আর বুদ্ধিকে কাজে লাগান, তবে এই ১০টি হকারি ব্যবসা আইডিয়া-এর যেকোনো একটি দিয়েই আপনি আপনার ভাগ্য বদলাতে পারেন।
মনে রাখবেন, কোনো কাজই ছোট নয়। আজকের এই ছোট শুরুটাই হয়তো কাল আপনার বড় কোনো ব্যবসার ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে। আপনার জন্য আমার শুভকামনা রইলো। শুরু করুন, থেমে থাকবেন না।
আপনার মন্তব্য: এই আইডিয়াগুলোর মধ্যে কোনটি আপনার সবচেয়ে ভালো লেগেছে? বা আপনার কাছে কি আরও কোনো নতুন আইডিয়া আছে? আমাকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!
এখানে কিছু প্রশ্ন যা হয়তো আপনার মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রশ্ন ১: হকারি ব্যবসা শুরু করতে ঠিক কত টাকা লাগে?
উত্তর: এটা সম্পূর্ণই আপনার ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভর করে। যেমন, আপনি যদি ঝালমুড়ি বা ফুল বিক্রি শুরু করেন, তবে ৫,০০০ টাকা দিয়েই শুরু করতে পারবেন। আবার মোবাইল এক্সেসরিজ বা জুসের ব্যবসা করতে গেলে হয়তো ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা লাগতে পারে।
প্রশ্ন ২: হকারি ব্যবসায় প্রতিদিন গড়ে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
উত্তর: এই প্রশ্নের কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে আপনার পণ্য, স্থান এবং আপনার চেষ্টার উপর। তবে সাধারণত, সবকিছু ঠিকঠাক চললে প্রতিদিনের খরচ বাদে ৫০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা (বা বিশেষ দিনে তারও বেশি) লাভ করা খুবই সম্ভব।
প্রশ্ন ৩: হকারি ব্যবসার জন্য কি ট্রেড লাইসেন্স লাগে?
উত্তর: সাধারণত, ছোট পরিসরে ফুটপাতে বা ভ্যানে হকারি করার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। তবে, আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে (যেমন: সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দকৃত ভ্যানে) ব্যবসা করতে চান, তখন হয়তো অনুমতি বা ছোট ফি-এর প্রয়োজন হতে পারে। আমি বলবো, শুরু করার আগে স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
কাপড়ের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ঘুরে আসুন।