রেডমি ১২ প্রাইস ইন বাংলাদেশ ২০২৫

বাজেট কম, কিন্তু স্টাইলিশ একটা ফোন চাচ্ছেন? এমন ফোন, যেটা হাতে নিলে বন্ধুরা বলবে “আরে, এটা তো বেশ প্রিমিয়াম!”। ঠিক এই জায়গাতেই শাওমি (Xiaomi) তাদের রেডমি ১২ (Redmi 12) ফোনটি বাজারে এনেছে। সত্যি বলতে, এই বাজেটে এমন সুন্দর গ্লাস ব্যাক ডিজাইন পাওয়াটা বেশ অবাক করার মতো। কিন্তু দেখতে সুন্দর হলেই তো হবে না, ফোনটির ভেতরের পারফরম্যান্স কেমন? ক্যামেরাই বা কতটা ভালো? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, দাম কত? আজকের এই রিভিউতে আমি “রেডমি ১২ প্রাইস ইন বাংলাদেশ” নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করবো। আমরা এর অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল দাম, সব খুঁটিনাটি স্পেসিফিকেশন এবং দিনশেষে এই ফোনটি আপনার টাকা খরচ করে কেনা উচিত হবে কিনা, তা বোঝার চেষ্টা করবো। চলুন, শুরু করা যাক!

রেডমি ১২ প্রাইস ইন বাংলাদেশ (Redmi 12 Price in Bangladesh)

রেডমি ১২
রেডমি ১২

যেকোনো ফোন কেনার আগে আমরা প্রথমে সেটার দামটাই জানতে চাই। রেডমি ১২ এর ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের বাজারে আপনি দুই ধরনের দামে এই ফোনটি পাবেন, অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল। এই দুটোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো ওয়ারেন্টি এবং মানসিক শান্তি। চলুন, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী দামগুলো দেখে নিই।

রেডমি ১২ অফিসিয়াল প্রাইস ইন বাংলাদেশ (Official Price)

অফিসিয়াল ফোন হলো সেই ফোন, যা শাওমি বাংলাদেশ সরাসরি আমদানি করে এবং যার সাথে আপনি ১ বছরের সম্পূর্ণ ব্র্যান্ড ওয়ারেন্টি পাবেন। ফোনের যদি কোনো সমস্যা হয়, আপনি সরাসরি শাওমির অফিসিয়াল সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে সেবা নিতে পারবেন। আমার মতে, দাম হাজারখানেক টাকা বেশি লাগলেও এই মানসিক শান্তিটাই আসল।

এখানে রেডমি ১২ এর বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের অফিসিয়াল দাম দেওয়া হলো:

ভ্যারিয়েন্ট (RAM/ROM) অফিসিয়াল মূল্য (BDT)
৪ জিবি / ১২৮ জিবি ৳ ১৬,৪৯৯ (আনুমানিক)
৮ জিবি / ২৫৬ জিবি ৳ ১৮,৯৯৯ (আনুমানিক)

দ্রষ্টব্য: এই দামগুলো শাওমির নির্ধারিত মূল্য। স্থান ও সময়ভেদে বা বিভিন্ন অফারের কারণে দাম কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। কেনার আগে অবশ্যই লেটেস্ট দাম চেক করে নেবেন।

রেডমি ১২ আনঅফিসিয়াল প্রাইস ইন বাংলাদেশ (Unofficial Price)

আনঅফিসিয়াল ফোনগুলো সাধারণত ট্যাক্স বা ভ্যাট ছাড়া বিভিন্নভাবে বাজারে আসে, তাই এগুলোর দাম অফিসিয়ালের চেয়ে ১,৫০০ থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত কম হতে পারে। যেমন, ৮ জিবি / ২৫৬ জিবি ভ্যারিয়েন্টটি হয়তো আপনি ১৬,৫০০ থেকে ১৭,০০০ টাকার মধ্যেও পেয়ে যেতে পারেন।

কিন্তু এখানে একটি বড় “কিন্তু” আছে। এই ফোনগুলোর সাথে কোনো ব্র্যান্ড ওয়ারেন্টি থাকে না। হয়তো দোকানদার আপনাকে ৭ দিনের একটি রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দেবেন, কিন্তু এরপর বড় কোনো সমস্যা হলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। তাই আমার পরামর্শ থাকবে, যদি বাজেট কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হয়, তবে সব সময় অফিসিয়াল ফোন কেনাই আপনার জন্য নিরাপদ।

রেডমি ১২ এর সম্পূর্ণ স্পেসিফিকেশন (Full Specifications)

দাম তো জানলাম, এবার চলুন দেখি এই দামে রেডমি ১২ আপনার হাতে কী কী তুলে দিচ্ছে। এক নজরে এর প্রধান ফিচারগুলো দেখে নেওয়া যাক।

ফিচার স্পেসিফিকেশন
ডিজাইন ও বিল্ড গ্লাস ব্যাক (Glass Back), প্লাস্টিক ফ্রেম
IP53, ডাস্ট ও স্প্ল্যাশ রেজিস্ট্যান্স
ডিসপ্লে ৬.৭৯ ইঞ্চি, IPS LCD
FHD+ (১০৮০ x ২৪৬০ পিক্সেল), ৯০Hz রিফ্রেশ রেট
প্রসেসর মিডিয়াটেক হেলিও G88 (১২ ন্যানোমিটার)
র‍্যাম ও রম ৪জিবি/৮জিবি (LPDDR4X)
১২৮জিবি/২৫৬জিবি (eMMC 5.1)
প্রধান ক্যামেরা ৫০ মেগাপিক্সেল (প্রধান) + ৮ মেগাপিক্সেল (আল্ট্রাওয়াইড) + ২ মেগাপিক্সেল (ম্যাক্রো)
সামনের ক্যামেরা ৮ মেগাপিক্সেল
ব্যাটারি ৫০০০ mAh
চার্জিং ১৮ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং (বক্সে চার্জার সহ)
অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ১৩ (MIUI 14)
অন্যান্য সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক, আইআর ব্লাস্টার

 

টেবিল দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, বাজেটের মধ্যে ফিচারগুলো বেশ আকর্ষণীয়। বিশেষ করে ৯০Hz রিফ্রেশ রেটের বড় ডিসপ্লে এবং গ্লাস ব্যাক ডিজাইন এই দামে সচরাচর দেখা যায় না। তবে এখানে eMMC 5.1 স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যা UFS স্টোরেজের চেয়ে কিছুটা ধীর। চলুন, এই বিষয়গুলো নিয়েই পরের ধাপে আলোচনা করি।

রেডমি ১২ এর ভালো দিকসমূহ (Pros)

আমি ফোনটি ব্যবহার করে এবং এর স্পেসিফিকেশন বিশ্লেষণ করে যে ভালো দিকগুলো পেয়েছি, তা হলো:

  • ১. চোখ ধাঁধানো গ্লাস ব্যাক ডিজাইন: সত্যি বলতে, এই দামে এমন সুন্দর দেখতে ফোন খুব কমই আছে। হাতে নিলেই একটা প্রিমিয়াম ফিল পাবেন, যা প্লাস্টিক বডির ফোনে কখনোই সম্ভব নয়। এটি দেখতে ২৫-৩০ হাজার টাকার ফোনের মতো লাগে।
  • ২. বিশাল ৯০Hz ডিসপ্লে: আপনি যদি মুভি দেখতে বা সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম) স্ক্রল করতে ভালোবাসেন, তবে এর বড় ৬.৭৯ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লে আপনার খুব পছন্দ হবে। ৯০Hz রিফ্রেশ রেটের কারণে স্ক্রলিং অনেক স্মুথ এবং আরামদায়ক লাগে।
  • ৩. IP53 রেটিং: এটি কোনো ওয়াটারপ্রুফ রেটিং নয়, তবে হালকা বৃষ্টি বা পানির ছিটা লাগলে ফোনটির কিছু হবে না। এই ছোট সুরক্ষাটি দৈনন্দিন ব্যবহারে অনেক স্বস্তি দেয়।
  • ৪. হেডফোন জ্যাক ও আইআর ব্লাস্টার: আজকাল অনেক ফোনেই ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক থাকছে না, কিন্তু এতে আছে। সাথে শাওমির সিগনেচার ‘আইআর ব্লাস্টার’ (IR Blaster) তো আছেই, যা দিয়ে আপনি ফোনকেই ঘরের এসি বা টিভির রিমোট বানিয়ে ফেলতে পারবেন।
  • ৫. ভালো ব্যাটারি লাইফ: ৫০০০ mAh ব্যাটারি থাকায় সাধারণ ব্যবহারে আপনি অনায়াসে একদিন পার করে দিতে পারবেন। সারাদিন ক্লাস বা অফিস করে এসেও রাতে চার্জে দিলেই চলবে।

রেডমি ১২ এর দুর্বল দিকসমূহ (Cons)

সব ভালো কিছুরই কিছু মন্দ দিক থাকে। রেডমি ১২ এর যে বিষয়গুলো আমার কাছে দুর্বল মনে হয়েছে:

  • ১. কিছুটা পুরোনো প্রসেসর: মিডিয়াটেক হেলিও G88 প্রসেসরটি বাজেট হিসেবে ঠিক আছে, তবে এটি কিছুটা পুরোনো। আপনি যদি ভারি গেম (যেমন: পাবজি হাই সেটিংসে) খেলার জন্য ফোনটি কিনতে চান, তবে আমি বলবো এটি আপনার জন্য নয়। সাধারণ ব্যবহারে সমস্যা না হলেও, গেমিংয়ে আপনি ল্যাগ বা ফ্রেম ড্রপ দেখতে পাবেন।
  • ২. স্লো eMMC স্টোরেজ: ফোনে UFS স্টোরেজের বদলে eMMC 5.1 ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে অ্যাপ ওপেন হতে বা ফাইল কপি হতে একটু বেশি সময় লাগে, যা মাঝে মাঝে বিরক্তিকর লাগতে পারে।
  • ৩. ধীর গতির চার্জিং: ৫০০০ mAh ব্যাটারি ভালো, কিন্তু তা চার্জ করার জন্য মাত্র ১৮ ওয়াটের চার্জার দেওয়া হয়েছে। এই বড় ব্যাটারি ফুল চার্জ হতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়, যা এই দ্রুতগতির যুগে বেশ ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়।
  • ৪. রাতের বেলার ক্যামেরা: দিনের আলোতে ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ভালো ছবি তুললেও, রাত হলেই বা কম আলোতে ছবির মান বেশ খারাপ হয়ে যায়, ছবিতে অনেক নয়েজ (Noise) দেখা যায়। আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরাও মাঝারি মানের।

রেডমি ১২ বনাম প্রতিযোগী (Redmi 12 vs Competitors)

এই বাজেটে রেডমি ১২ কিন্তু একা নয়। এর প্রধান প্রতিযোগী হলো রিয়েলমি বা টেকনোর কিছু ফোন। যেমন, Realme C55 বা Tecno Spark 10 Pro

  • ডিজাইনের দিক থেকে: আমি বলবো রেডমি ১২ এর গ্লাস ব্যাক ডিজাইন সবার চেয়ে এগিয়ে।
  • পারফরম্যান্সের দিক থেকে: রিয়েলমি C55 (Helio G88) এবং টেকনো স্পার্ক ১০ প্রো (Helio G88) প্রায় একই রকম পারফরম্যান্স দেয়।
  • চার্জিংয়ের দিক থেকে: রিয়েলমি C55 আপনাকে ৩৩ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং দিচ্ছে, যা রেডমি ১২ এর ১৮ ওয়াট থেকে অনেক দ্রুত।

তাই, আপনাকে ডিজাইন এবং ফাস্ট চার্জিংয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে।

এই বাজেটে রেডমি ১২ কেনা কি ঠিক হবে? 

দেখুন, সোজা কথায় আসি। “রেডমি ১২ প্রাইস ইন বাংলাদেশ” ট্যাগলাইন অনুযায়ী, এই ফোনটি সবার জন্য নয়।

আপনার জন্য এই ফোনটি সেরা হবে যদি:

  • আপনি এমন একটি ফোন চান যা দেখতে খুব সুন্দর এবং প্রিমিয়াম।
  • আপনার প্রধান কাজ মুভি দেখা, ইউটিউব, ফেসবুক ব্রাউজিং এবং সাধারণ কল।
  • আপনার একটি বড় ব্যাটারি দরকার যা সারাদিন চলে।
  • আপনি টুকটাক ছবি তোলেন, বিশেষ করে দিনের আলোতে।

আপনার এই ফোনটি এড়িয়ে চলা উচিত যদি:

  • আপনি একজন সিরিয়াস গেমার হন।
  • আপনার খুব দ্রুত চার্জিং সুবিধা প্রয়োজন (যেমন, ৩০-৪০ মিনিটে ফুল চার্জ)।
  • আপনার কাছে ফাস্ট অ্যাপ ওপেনিং স্পিড বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আমার মতে, এটি তাদের জন্য একটি পারফেক্ট ফোন, যারা পারফরম্যান্সের চেয়ে ডিজাইন এবং মিডিয়া ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেন।

শেষ কথা

সব মিলিয়ে, রেডমি ১২ একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে বানানো হয়েছে। এর গ্লাস ব্যাক ডিজাইন নিঃসন্দেহে এই বাজেটের সেরা। তবে পারফরম্যান্সে কিছুটা আপস করা হয়েছে। আপনি যদি আপনার বাবা-মা’কে একটি সুন্দর ফোন উপহার দিতে চান, অথবা নিজের জন্য এমন একটি ফোন চান যা দেখতে দামি দেখায় এবং সাধারণ সব কাজ করে দেয়, তবে রেডমি ১২ আপনাকে হতাশ করবে না। কিন্তু আপনি যদি ‘পাওয়ার ইউজার’ হন, তবে বাজেট কিছুটা বাড়িয়ে অন্য মডেল দেখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এখানে রেডমি ১২ নিয়ে আপনাদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিলাম:

প্রশ্ন ১: রেডমি ১২ কি গেমিং এর জন্য ভালো?

উত্তর: না, এটি গেমিং ফোন নয়। আপনি ফ্রি ফায়ারের মতো গেম মোটামুটি খেলতে পারলেও, পাবজি বা কল অফ ডিউটির মতো ভারি গেম হাই সেটিংসে খেলতে গেলে ফোনটি ল্যাগ করবে। এটি মূলত সাধারণ ব্যবহারের জন্য তৈরি।

প্রশ্ন ২: রেডমি ১২ এর ক্যামেরা কি আসলেই ভালো?

উত্তর: এর ৫০ মেগাপিক্সেল মূল ক্যামেরা দিনের আলোতে বেশ বিস্তারিত এবং সুন্দর ছবি তোলে। তবে মেগাপিক্সেল বেশি হলেই যে ছবি ভালো হবে, তা নয়। কম আলোতে এর পারফরম্যান্স মাঝারি মানের।

প্রশ্ন ৩: রেডমি ১২ কি ৫জি সাপোর্ট করে?

উত্তর: না, এটি একটি ৪জি (4G) ফোন। এই বাজেটে ৫জি সাপোর্ট সাধারণত পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন ৪: রেডমি ১২ ফুল চার্জ হতে কত সময় লাগে?

উত্তর: এর ৫০০০ mAh ব্যাটারিটি বক্সে থাকা ১৮ ওয়াট চার্জার দিয়ে ফুল চার্জ হতে প্রায় ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগতে পারে।

আশা করি এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে রেডমি ১২ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছে। আপনার বাজেট এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এখন আপনি সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারবেন। এই বিষয়ে আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

নকিয়া বাটন মোবাইল দাম 105 (Nokia 105) সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।

Leave a Comment