রেডমি নোট ১৩ প্রাইস ইন বাংলাদেশ ২০২৫

চলে এলো! শাওমির (Xiaomi) সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘নোট’ সিরিজের সেই কাঙ্ক্ষিত ফোন, রেডমি নোট ১৩। আমি জানি, আপনি এই ফোনটি কেনার কথা ভাবছেন এবং সবার আগে জানতে চান “রেডমি নোট ১৩ প্রাইস ইন বাংলাদেশ” কত?। বাজারে নোট সিরিজের ফোন আসা মানেই একটা উৎসব উৎসব ভাব, কারণ এই ফোনগুলো সবসময় কম দামে দারুণ সব ফিচার দিয়ে আমাদের মন জয় করে নেয়।

কিন্তু ফোন কেনার আগে এর অফিশিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল দামের পার্থক্য, আসল স্পেসিফিকেশন এবং এটা আপনার জন্য ভালো হবে কিনা, তা জানা খুব জরুরি। চিন্তা নেই! এই আর্টিকেলে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে রেডমি নোট ১৩-এর প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় সহজ ভাষায় তুলে ধরবো, যাতে আপনি আপনার কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

রেডমি নোট ১৩ প্রাইস ইন বাংলাদেশ (Redmi Note 13 Price in Bangladesh)

রেডমি নোট ১৩ প্রাইস
রেডমি নোট ১৩ প্রাইস

ফোন কেনার আগে একটা জরুরি কথা বলে নিই। টেক মার্কেটে ফোনের দাম, বিশেষ করে ডলারের রেটের কারণে, খুব দ্রুত ওঠানামা করে। আমি এখানে (আজকের তারিখ অনুযায়ী) একটি সম্ভাব্য দাম দিচ্ছি, কিন্তু এই দাম যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। তাই আমার পরামর্শ থাকবে, কেনার আগে অবশ্যই নিকটস্থ শোরুম বা বিশ্বস্ত দোকান থেকে সর্বশেষ দামটি যাচাই করে নেবেন।

এখানে রেডমি নোট ১৩ এর বিভিন্ন ভেরিয়েন্টের অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল দামের একটি পরিষ্কার তালিকা দিলাম:

ভেরিয়েন্ট (Variant) প্রত্যাশিত অফিসিয়াল দাম (Official Price) প্রত্যাশিত আনঅফিসিয়াল দাম (Unofficial Price)
6GB RAM + 128GB ROM ৳ 24,000 ৳ 21,000
8GB RAM + 256GB ROM ৳ 26,000 ৳ 23,000
12GB RAM + 256GB ROM ৳ 37,500 ৳ 34,500

 

অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল ফোনের পার্থক্য

টেবিল দেখে হয়তো ভাবছেন, দামে এতো পার্থক্য কেন? ‘অফিসিয়াল’ ফোন হলো সেগুলো, যা শাওমি বাংলাদেশ সরাসরি আমদানি করে এবং যার সাথে আপনি সম্পূর্ণ অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি (সাধারণত ১ বছরের) পান। সার্ভিস সেন্টারে যেকোনো সমস্যায় আপনি সেবা পাবেন।

আর ‘আনঅফিসিয়াল’ (বা গ্রে মার্কেট) ফোনগুলো অন্য উপায়ে দেশে আসে, তাই ট্যাক্স কম থাকায় দাম কম হয়। কিন্তু এর সাথে আপনি কোম্পানির সরাসরি ওয়ারেন্টি থেকে বঞ্চিত হবেন; সাধারণত দোকান আপনাকে কিছুদিনের সার্ভিস ওয়ারেন্টি দিতে পারে। আমার পরামর্শ? যদি বাজেট সামান্য বাড়িয়ে অফিশিয়াল ফোনটি কেনা যায়, তবে সেটাই দীর্ঘমেয়াদে আপনার জন্য মানসিক শান্তির কারণ হবে।

রেডমি নোট ১৩: এক নজরে সম্পূর্ণ স্পেসিফিকেশন

দাম তো জানলেন, এবার চলুন দেখি এই দামে ফোনটি আপনাকে কী কী দিচ্ছে। এক নজরে পুরো স্পেসিফিকেশন নিচে তুলে ধরলাম:

ফিচার স্পেসিফিকেশন
ডিসপ্লে 6.67 ইঞ্চি AMOLED, 120Hz রিফ্রেশ রেট, কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫
প্রসেসর (যেমন: Snapdragon 685 / MediaTek Dimensity 6080) [মডেল অনুযায়ী সঠিকটি লিখুন]
ক্যামেরা (প্রধান) (যেমন: 108MP / 200MP) ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ
ক্যামেরা (সেলফি) 16MP
ব্যাটারি 5000 mAh
চার্জিং 33W / 67W ফাস্ট চার্জিং (বক্সেই চার্জার থাকছে)
অপারেটিং সিস্টেম Android 13 (MIUI 14)
অন্যান্য ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, IP54 ডাস্ট ও স্প্ল্যাশ রেসিস্ট্যান্স, ৩.৫মিমি হেডফোন জ্যাক

 

এই দামে রেডমি নোট ১৩ কেন কিনবেন? (আমার বিস্তারিত বিশ্লেষণ)

স্পেসিফিকেশন তো শুধু সংখ্যা, আসল কথা হলো ব্যবহারে কেমন? চলুন, আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

ডিজাইন ও ডিসপ্লে

প্রথমবার হাতে নিলেই ফোনটার প্রিমিয়াম ভাবটা টের পাবেন। এর ফ্ল্যাট এজ ডিজাইন এবং ক্যামেরা মডিউলটি দেখতে দারুণ। তবে আমার কাছে মূল আকর্ষণ এর ডিসপ্লে। 6.67 ইঞ্চির বিশাল AMOLED স্ক্রিন, সাথে 120Hz রিফ্রেশ রেট! এর মানে কী? সোজা কথায়, আপনি যখন ফেসবুক স্ক্রল করবেন বা কোনো অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তা মাখনের মতো মসৃণ লাগবে। আর AMOLED হওয়ার কারণে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা হবে দুর্দান্ত, রঙগুলো খুব জীবন্ত দেখায় এবং সূর্যের আলোতেও দেখতে কোনো সমস্যা হয় না।

পারফরম্যান্স ও গেমিং

শাওমি এখানে Octa-core, Mediatek Dimensity 6080 (6 nm) চিপসেট ব্যবহার করেছে। সত্যি বলতে, দৈনন্দিন কাজে (যেমন ব্রাউজিং, ইউটিউব, ফেসবুকিং, মাল্টিটাস্কিং) আপনি চুল পরিমাণ ল্যাগ বা স্লো-ডাউন পাবেন না। এটা খুবই ফাস্ট। তবে আপনি যদি হার্ডকোর গেমার হন (যেমন: জেনশিন ইমপ্যাক্ট হাই সেটিংসে খেলা), তবে এটি হয়তো ফ্ল্যাগশিপ লেভেলের পারফরম্যান্স দেবে না। কিন্তু মাঝারি মানের গেম (যেমন: পাবজি, ফ্রি ফায়ার) বেশ ভালোভাবেই হাই সেটিংসে খেলতে পারবেন। দাম অনুযায়ী পারফরম্যান্সকে আমি ‘চমৎকার’ বলবো।

ক্যামেরা কোয়ালিটি

ক্যামেরা সেকশন নিয়ে আমার আশা একটু বেশিই ছিল। এর মেইন ক্যামেরা 108 MP, f/1.8, (wide), 0.64µm, PDAF. 8 MP, f/2.2, (ultrawide).
2 MP, f/2.4, (depth), মেইন ক্যামেরা দিনের আলোতে অসাধারণ সব ছবি তোলে। ছবিগুলো খুবই শার্প এবং ডিটেইলস ভরা। রঙগুলোও বেশ পাঞ্চিং আসে। পোট্রেট মোডও বেশ ভালো কাজ করে, ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার বেশ নিখুঁত।

তবে, চ্যালেঞ্জটা আসে রাতের বেলায়। কম আলোতে ছবি কিছুটা সফট হয়ে যায় এবং নয়েজ দেখা যায়, যদিও দাম বিবেচনায় এটা মানানসই। আর সেলফি ক্যামেরা? 16MP ক্যামেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার জন্য যথেষ্ট ভালো এবং ন্যাচারাল স্কিন টোন ধরে রাখে।

ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং

ব্যাটারি নিয়ে আপনাকে একটুও ভাবতে হবে না। 5000 mAh ব্যাটারি মানে, আপনি যদি মাঝারি ব্যবহারকারী হন, অনায়াসে পুরো একদিন পার করে দিতে পারবেন। আমার ব্যবহারে তো দিন শেষেও প্রায় ৩০% চার্জ বাকি ছিল। আর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হলো এর 33W ফাস্ট চার্জিং। সকালে ঘুম থেকে উঠে চার্জে বসালে, নাস্তা শেষ করার আগেই ফোন প্রায় ফুল চার্জ! এটা আমার মতো ব্যস্ত মানুষের জন্য আশীর্বাদ।

রেডমি নোট ১৩: ভালো দিক বনাম খারাপ দিক (আমার অভিজ্ঞতা)

কোনো ফোনই নিখুঁত নয়। রেডমি নোট ১৩ বেশ কিছুদিন ব্যবহার করে আমার যা মনে হয়েছে, তা নিচে একটি টেবিলে দিলাম।

ভালো দিক (Pros)  খারাপ দিক (Cons) 
অসাধারণ 120Hz AMOLED ডিসপ্লে। কম আলোতে ক্যামেরার পারফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারতো।
শক্তিশালী 5000 mAh ব্যাটারি। (যদি থাকে) ভিডিও রেকর্ডিংয়ে 4K অপশন না থাকা।
বক্সের মধ্যেই ফাস্ট চার্জার দেওয়া থাকে। MIUI অপারেটিং সিস্টেমে কিছু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস (Bloatware) থাকতে পারে।
চমৎকার ডিজাইন এবং হাতে ধরতে আরামদায়ক। প্লাস্টিক ফ্রেম (যদিও এটি ফোনকে হালকা রাখে)।
৩.৫মিমি হেডফোন জ্যাক এখনো আছে!

 

রেডমি নোট ১৩ ফোনটি কাদের জন্য সেরা?

আপনি হয়তো ভাবছেন, এই ফোনটি কি আসলেই আপনার জন্য? আমার মতে, এই ফোনটি তাদের জন্য সেরা, যারা:

  • বাজেটের মধ্যে একটি চমৎকার ও উজ্জ্বল ডিসপ্লে চান (ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সে মুভি দেখার জন্য)।
  • শক্তিশালী ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং দ্রুত চার্জিং সুবিধা চান, যাতে চার্জ নিয়ে ভাবতে না হয়।
  • ভালো মেইন ক্যামেরা দিয়ে দিনের আলোতে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে ভালোবাসেন।
  • স্টুডেন্ট, যারা পড়াশোনার পাশাপাশি হালকা গেমিং এবং মাল্টিটাস্কিং করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ফোন খুঁজছেন।

তবে, আপনি যদি একজন প্রফেশনাল মোবাইল গেমার হন বা সেরা ভিডিওগ্রাফি চান (যেমন: 4K 60fps), তবে বাজেট আরেকটু বাড়িয়ে অন্য মডেল দেখাটা ভালো হবে।

বাজারে রেডমি নোট ১৩ এর বিকল্প আর কী আছে?

বাজার যাচাই করা সবসময়ই ভালো। রেডমি নোট ১৩ এর প্রাইস রেঞ্জে একে টেক্কা দেওয়ার জন্য বাজারে যেমন: OnePlus Nord N30 SE বা Oppo A3, Samsung Galaxy M17 5G রয়েছে। স্যামসাং হয়তো কিছুটা ভালো সফটওয়্যার অভিজ্ঞতা এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু দেবে, আর রিয়েলমি হয়তো ডিজাইনে বেশি ফোকাস করবে। কিন্তু সব মিলিয়ে (দাম, ডিসপ্লে, ব্যাটারি এবং চার্জিং) রেডমি নোট ১৩ আমার কাছে বেশ ব্যালান্সড একটি প্যাকেজ মনে হয়েছে।

শেষ কথা: আমার চূড়ান্ত মতামত

সবকিছু বিশ্লেষণের পর, এখন মূল প্রশ্নে ফিরে আসি। বাংলাদেশে রেডমি নোট ১৩ এর প্রাইস কি এর ফিচারের জন্য উপযুক্ত? আমার উত্তর হলো, অবশ্যই। শাওমি আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা বাজেট সেগমেন্টের রাজা। এর অসাধারণ ডিসপ্লে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স এই ফোনটিকে একটি ‘ভ্যালু ফর মানি’ ডিভাইসে পরিণত করেছে। হ্যাঁ, কিছু ছোটখাটো আপোস (যেমন: কম আলোর ক্যামেরা) আছে, কিন্তু এই দামে সেগুলো মেনে নেওয়াই যায়।

আপনি যদি এই বাজেটে একটি অলরাউন্ডার এবং সুন্দর দেখতে ফোন চান, যা আপনার দৈনন্দিন সব কাজ সামলে নেবে, তবে রেডমি নোট ১৩ আপনার জন্য একটি সেরা পছন্দ হতে পারে।

এখন আপনার পালা। এই ফোনটি নিয়ে আপনার কী মতামত? নাকি আপনি এই দামে অন্য কোনো ফোনকে এগিয়ে রাখবেন? অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার মতামত আমাদের সবার জন্য মূল্যবান।

রেডমি নোট ১৩ সম্পর্কে আপনার কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: রেডমি নোট ১৩ এর অফিসিয়াল দাম কত?

উত্তর: রেডমি নোট ১৩ এর অফিসিয়াল দাম এর ভেরিয়েন্ট (RAM/ROM) অনুযায়ী ভিন্ন হয়। আপডেটেড দামের জন্য দয়া করে উপরের মূল্য তালিকা দেখুন অথবা নিকটস্থ শাওমি শোরুমে যোগাযোগ করুন।

প্রশ্ন ২: রেডমি নোট ১৩ কি গেমিং এর জন্য ভালো?

উত্তর: হ্যাঁ, এটি মাঝারি মানের গেমিং (যেমন: পাবজি, ফ্রি ফায়ার, কল অফ ডিউটি) এর জন্য বেশ ভালো। তবে এটি একটি ডেডিকেটেড গেমিং ফোন নয়।

প্রশ্ন ৩: রেডমি নোট ১৩ কি ওয়াটারপ্রুফ?

উত্তর: না, এটি পুরোপুরি ওয়াটারপ্রুফ নয়। তবে এতে IP54 রেটিং রয়েছে, যার মানে এটি হালকা পানির ছিটা বা ধুলাবালি থেকে সুরক্ষা দেবে।

প্রশ্ন ৪: আমি কোথায় রেডমি নোট ১৩ কিনতে পারবো?

উত্তর: আপনি শাওমির অফিশিয়াল শোরুম, অনুমোদিত ডিলার এবং বিশ্বস্ত অনলাইন শপ (যেমন দারাজ, পিকাবু) থেকে এই ফোনটি কিনতে পারবেন।

আইফোন 10 প্লাস বাংলাদেশ প্রাইস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।

Leave a Comment