বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণের দাম ২০২৫ – সর্বশেষ আপডেট

সোনা! এই একটা শব্দ শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে কত আনন্দ, কত স্মৃতি। কারো কাছে এটা বিয়ের কনের সাজ, কারো কাছে সন্তানের অন্নপ্রাশনের প্রথম উপহার, আবার কারো কাছে এটা ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় সঞ্চয় বা বিপদের বন্ধু। আমি জানি, আপনিও আমার মতোই স্বর্ণকে শুধু একটা ধাতু হিসেবে দেখেন না, এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সংস্কৃতি আর নিরাপত্তা। কিন্তু যখনই আমরা সোনা কিনতে বা বেচতে যাই, আমাদের সবার মনে একটাই প্রশ্ন উঁকি দেয় “আজকের দাম কত?” আর এই দাম জানার জন্য আমরা যে প্রতিষ্ঠানটির ওপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করি, সেটি হলো “বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি” বা বাজুস (BAJUS)।

স্বাগতম! আজকের এই পোস্টে আমি, আপনার গাইড হিসেবে, বাজুস নির্ধারিত স্বর্ণের দামের আদ্যোপান্ত সহজ করে বুঝিয়ে বলবো। শুধু দামই নয়, কেন দাম বাড়ে বা কমে, কেনার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন, এবং কীভাবে আপনি আপনার কষ্টার্জিত টাকায় সেরা জিনিসটি চিনবেন তার সবটাই থাকবে এখানে।

চলুন, শুরু করা যাক।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS) কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS)
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS)

ধরুন, একটি দেশের পুরো স্বর্ণের বাজার চলছে কিন্তু এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন বা তদারকিকারী নেই। তাহলে কী হতো? একেক দোকানে একেক দাম, ক্রেতারা হতেন প্রতারিত, আর ব্যবসায়ীরাও পড়তেন বিপাকে।

ঠিক এই জায়গাতেই বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS)-এর গুরুত্ব। আপনি একে বলতে পারেন বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসার অভিভাবক।

  • প্রামাণিকতা (Authoritativeness): বাজুস হলো স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি (যেমন ডলারের দাম, চাহিদা) বিবেচনা করে স্বর্ণের একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে।
  • বিশ্বাসযোগ্যতা (Trustworthiness): যখন বাজুস কোনো দাম ঘোষণা করে, তখন সারা দেশের সব নিবন্ধিত জুয়েলার্স সেই দাম অনুসরণ করতে বাধ্য থাকে। এর ফলে বাজারে একটা শৃঙ্খলা থাকে। আপনি যখন কোনো দোকানে গিয়ে বাজুস-এর দামের রেফারেন্স দেন, তখন বিক্রেতা সেটা অস্বীকার করতে পারেন না। এটাই আপনার বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা।

সোজা কথায়, বাজুস আছে বলেই আমি বা আপনি দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে স্বর্ণের দামের একটা স্ট্যান্ডার্ড বা মানদণ্ড পাই।

বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত আজকের স্বর্ণের দাম (২০২৫ আপডেট)

এটাই সম্ভবত সেই সেকশন যার জন্য আপনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন! তবে একটা বিষয় আমি শুরুতেই খোলাসা করে বলতে চাই, স্বর্ণের দাম কিন্তু খুবই পরিবর্তনশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে হয়তো সকালেও এক রেট ছিল, বিকেলে তা বদলে গেছে। বাজুস সেই পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করেই দাম আপডেট করে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি এখানে [আজকের তারিখ]-এর সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী দাম উল্লেখ করছি। তবে আপনি যখন সোনা কিনতে যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে শোরুম থেকে দামটি আরেকবার অবশ্যই যাচাই করে নেবেন। এটা আমার অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ।

নিচে বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণের দাম (প্রতি ভরি) একটি ছকে দেওয়া হলো:

ক্যারেট (বিশুদ্ধতা) প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) প্রতি গ্রাম
২২ ক্যারেট (৯১.৬%) ৳ ২ লাখ ৮ হাজার ৪৭১ টাকা ৳ ১৭৮৭৩.০২
২১ ক্যারেট (৮৭.৫%) ৳ ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ৳ ১৭০৬১.০৪
১৮ ক্যারেট (৭৫.০%) ৳ ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৬৩ টাকা ৳ ১৪৬২৩.০২
সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ৳ ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৮ টাকা ৳ ১৪৭৩৪.০৫

রুপার দাম:

(বাজুস শুধু সোনা নয়, রুপার দামও নির্ধারণ করে)

  • ২১ ক্যারেট (ক্যাডমিয়াম) রুপা (প্রতি ভরি): ৳ [আপডেট মূল্য লিখুন]
  • সনাতন পদ্ধতির রুপা (প্রতি ভরি): ৳ [আপডেট মূল্য লিখুন]

কেন স্বর্ণের দাম ঘনঘন পরিবর্তন হয়? (বাজুস-এর প্রেক্ষাপট)

আপনারও কি কখনো মনে হয়েছে, “আরে! সেদিনই তো দাম কমলো, আজ আবার বাড়লো কেন?” আমার নিজেরও এই প্রশ্নটা অনেকবার এসেছে। আসলে আমরা শুধু বাজুস-এর ঘোষণাটা শুনি, কিন্তু এর পেছনের কারণগুলো অনেক গভীর। বাজুস মূলত কয়েকটি বড় ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে দাম সমন্বয় করে:

আন্তর্জাতিক বাজার (International Market)

এটা হলো সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়। মনে রাখবেন, বাংলাদেশ সোনা উৎপাদন করে না, আমরা পুরোটাই আমদানি করি। তাই লন্ডন, নিউইয়র্ক, দুবাইয়ের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে বা কমে, তার সরাসরি প্রভাব আমাদের দেশের বাজারে পড়ে।

ডলারের বিনিময় হার (USD Exchange Rate)

আমরা যেহেতু সোনা আমদানি করি, তাই এর মূল্য ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এখন, ধরুন আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম স্থির আছে, কিন্তু টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে গেল। তখন স্বাভাবিকভাবেই সোনা আমদানি করতে বেশি টাকা লাগবে, ফলে বাজুস দাম বাড়াতে বাধ্য হয়।

স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহ (Local Demand & Supply)

এটা একটা সাধারণ অর্থনীতির সূত্র। আমাদের দেশে সাধারণত বিয়ের মৌসুম বা ঈদের আগে সোনার চাহিদা তুঙ্গে থাকে। যখন চাহিদা বেশি থাকে, তখন দাম কিছুটা বাড়তির দিকে থাকতে পারে।

সরকারি শুল্ক ও ভ্যাট (Govt. Tax & VAT)

সরকার প্রতি বছর বাজেটে সোনা আমদানির ওপর শুল্ক (Tax) বা ভ্যাট আরোপ বা পরিবর্তন করে। যদি সরকার শুল্ক বাড়িয়ে দেয়, তবে আমদানিকারকদের খরচ বাড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তা ক্রেতা হিসেবে আপনাকেই বহন করতে হয়।

স্বর্ণ কেনার আগে একজন ক্রেতার কী কী জানা প্রয়োজন?

আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেকেই শুধু বাজুস-এর ঘোষিত দাম জেনেই দোকানে চলে যান, এবং পরে মোট বিল দেখে অবাক হন। এখানেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার আছে। সোনা কেনা শুধু টাকা আর ওজনের ব্যাপার নয়, এটা একটা আস্থার ব্যাপার।

বাজুস নির্ধারিত দামই কি শেষ কথা? (ভ্যাট ও মজুরি)

না! এটাই সবচেয়ে বড় পয়েন্ট। এটা মনে গেঁথে নিন।

বাজুস যে দামটি ঘোষণা করে, সেটা হলো খাঁটি সোনার দাম। আপনি যখন কোনো গহনা কেনেন, তখন এর সাথে আরও দুটি জিনিস যুক্ত হয়:

১. মজুরি (Making Charge): গহনাটি তৈরি করার পারিশ্রমিক। এটা ডিজাইন ভেদে ভিন্ন হয়। একটা সাধারণ চেইনের মজুরি আর একটা সূক্ষ্ম কারুকাজের জরোয়া সেটের মজুরি কখনো এক হবে না।

২. ভ্যাট (VAT): সরকার নির্ধারিত ভ্যাট, যা আপনার মোট কেনাকাটার ওপর প্রযোজ্য হয়।

আমার টিপস: দোকানে ঢুকেই জিজ্ঞেস করুন, “আপনাদের মজুরি কত শতাংশ?” বা “প্রতি গ্রামে মজুরি কত?” এবং ভ্যাটসহ চূড়ান্ত দাম কত পড়বে, সেটা কেনার আগেই লিখিতভাবে জেনে নিন।

হলমার্ক (Hallmark) দেখে কিনুন

আপনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে ২২ ক্যারেট বলে আপনাকে ১৮ ক্যারেট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না? এর একমাত্র গ্যারান্টি হলো হলমার্ক। এটা সোনায় খোদাই করা একটি ছোট চিহ্ন যা এর বিশুদ্ধতা (Purity) নিশ্চিত করে। বাজুস অনুমোদিত সব ভালো দোকান হলমার্ক করা গহনা বিক্রি করতে বাধ্য।

ক্যাশ মেমো (Cash Memo) অবশ্যই সংগ্রহ করুন

আমি এটাকে বলি “সোনার জন্মসনদ”। আপনি যত টাকারই সোনা কিনুন না কেন, অবশ্যই হলমার্ক সিলসহ স্পষ্ট ক্যাশ মেমো সংগ্রহ করুন। এই মেমোতে সোনার ওজন, ক্যারেট, মজুরি এবং ভ্যাটের বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে। ভবিষ্যতে আপনি যখন ওই সোনা বিক্রি করতে বা বদলাতে যাবেন, এই মেমোটিই হবে আপনার প্রধান ভরসা। মেমো ছাড়া সোনা কেনা আর রসিদ ছাড়া জমি কেনা একই রকম ঝুঁকিপূর্ণ।

পুরনো স্বর্ণ বিক্রি বা পরিবর্তন করার নিয়ম (বাজুস-এর গাইডলাইন)

আমাদের অনেকের কাছেই মায়ের বা দাদির পুরনো গহনা থাকে যা আমরা বদলে নতুন ডিজাইন নিতে চাই। অথবা জরুরি প্রয়োজনে বিক্রি করতে চাই।

এক্ষেত্রে বাজুস-এর একটি সাধারণ নিয়ম আছে। আপনি যখন পুরনো সোনা বিক্রি করতে যাবেন, তখন দোকানদার আপনার কাছ থেকে কেনার সময় কিছু শতাংশ বাদ দিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন।

  • কেন বাদ দেয়? কারণ পুরনো সোনাটি গলিয়ে আবার নতুন করে খাঁটি করতে হয়, এতে কিছুটা ওজন কমে যায় (যাকে “ঘাটতি” বলে) এবং এর একটা খরচও আছে।
  • কতটা বাদ দেয়? সাধারণত, আপনি যে দোকান থেকে কিনেছেন, সেই দোকানে ক্যাশ মেমোসহ ফেরত দিলে তারা তুলনামূলক ভালো দাম দেয়। তবে অন্য দোকানে বিক্রি করলে তারা কিছুটা বেশি কেটে রাখতে পারে।
  • পাথরের ওজন: আপনার গহনায় যদি কোনো পাথর (যেমন: রুবি, পান্না, হীরা বা সাধারণ পাথর) থাকে, তবে বিক্রি করার সময় সেই পাথরের ওজন মোট ওজন থেকে বাদ দেওয়া হবে। কারণ দোকানদার শুধু খাঁটি সোনাটুকুর দামই আপনাকে দেবেন।

আমার শেষ কথা

স্বর্ণ আমাদের জীবনে শুধু একটি অলঙ্কার নয়, এটি একটি বড় আবেগ এবং অর্থনৈতিক স্তম্ভ। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS) এই বাজারকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের আস্থার জায়গাটি ধরে রেখেছে। আমি আশা করি, এই দীর্ঘ আলোচনা আপনার উপকারে এসেছে। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে শুধু “আজকের স্বর্ণের দাম” জানিয়েই শেষ না করা, বরং পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে সচেতন করা।

মনে রাখবেন, সোনা কেনার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। দাম যাচাই করুন, হলমার্ক দেখুন, মজুরি নিয়ে কথা বলুন এবং সবশেষে ক্যাশ মেমোটি যত্ন করে রাখুন। আপনার বিনিয়োগ হোক নিরাপদ ও আনন্দময়।

এখানে কিছু প্রশ্ন দেওয়া হলো যা সাধারণত মানুষ করে থাকেন:

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি স্বর্ণের দাম কখন আপডেট করে?

উত্তর: এর কোনো নির্দিষ্ট রুটিন সময় নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন হলে, ডলারের দাম বাড়লে বা কমলে, অথবা স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাজুস যেকোনো দিন যেকোনো সময় নতুন দাম ঘোষণা করতে পারে।

প্রশ্ন ২: ২২ ক্যারেট ও ২১ ক্যারেট স্বর্ণের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: মূল পার্থক্য হলো খাঁটি সোনার পরিমাণে। ২২ ক্যারেট মানে এতে ৯১.৬% খাঁটি সোনা আছে (বাকিটা অন্য ধাতু মেশানো), আর ২১ ক্যারেটে ৮৭.৫% খাঁটি সোনা থাকে। ২২ ক্যারেট সোনা ২১ ক্যারেটের চেয়ে কিছুটা নরম এবং বেশি উজ্জ্বল হয়।

প্রশ্ন ৩: বাজুস-এর নির্ধারিত দামে কি ভ্যাট ও মজুরি অন্তর্ভুক্ত থাকে?

উত্তর: না, থাকে না। বাজুস-এর ঘোষিত দাম হলো শুধু খাঁটি সোনার দাম। এর সাথে আপনাকে আলাদাভাবে মজুরি (Making Charge) এবং ৫% (বা সরকার নির্ধারিত হারে) ভ্যাট যোগ করে মোট মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

প্রশ্ন ৪: হলমার্ক ছাড়া সোনা কেনা কি নিরাপদ?

উত্তর: একদমই না। হলমার্ক হলো আপনার সোনার বিশুদ্ধতার সরকারি গ্যারান্টি। হলমার্ক ছাড়া সোনা কিনলে আপনি ওজনে বা ক্যারেটে প্রতারিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকবেন। এটা কেনা একেবারেই উচিত নয়।

লাভজনক হকারি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।

Leave a Comment