বাজেট যখন কম থাকে, তখন একটা ভালো স্মার্টফোন খুঁজে বের করা সত্যিই কঠিন একটা কাজ। প্রতিটি টাকা তখন অনেক মূল্যবান। আপনিও হয়তো ‘আইটেল ভিশন ২’ (itel Vision 2) ফোনটি কেনার কথা ভাবছেন এবং এর সর্বশেষ দাম কত তা জানতে ইন্টারনেটে খুঁজছেন। আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। বাজারে অনেক ফোন আসে আর যায়, কিন্তু কম বাজেটের মধ্যে কিছু ফোন ক্রেতাদের মনে জায়গা করে নেয়। আইটেল ভিশন ২ তেমনই একটি ফোন। এই পোস্টে আমি কেবল আইটেল ভিশন ২ এর অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল দাম নিয়েই কথা বলবো না, আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে এর প্রতিটি ছোট-বড় দিক, এর আসল পারফর্ম্যান্স কেমন, এবং এই দামে ফোনটি আপনার কেনা ঠিক হবে কি না, তা খোলাখুলি আলোচনা করবো। চলুন, শুরু করা যাক।
আইটেল ভিশন ২: বর্তমান বাজার মূল্য
চলুন, প্রথমেই মূল প্রশ্নে আসা যাক, আইটেল ভিশন ২ এর দাম কত? একটা কথা শুরুতেই পরিষ্কার করে দেই, মোবাইল ফোনের বাজার দর কিন্তু সব সময় এক থাকে না। স্থান, দোকান আর বিভিন্ন অফারের ওপর ভিত্তি করে দাম কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।
অফিসিয়াল দাম:
আইটেল ভিশন ২ যখন বাজারে নতুন এসেছিল, তখন এর ২ জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি রমের ভেরিয়েন্টটির অফিসিয়াল দাম ছিল ৮,৪৯০ টাকা।
তবে, এই মডেলটি বাজারে বেশ কিছুদিন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে নতুন অফিসিয়াল ফোন পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। বেশিরভাগ দোকানেই হয়তো এর স্টক শেষ হয়ে গেছে।
আনঅফিসিয়াল দাম:
আনঅফিসিয়াল মার্কেটে এই ফোনটি আপনি আরও কিছুটা কমে পেতে পারেন। সাধারণত, আনঅফিসিয়াল আইটেল ভিশন ২ এর দাম প্রায় ৭,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে, আনঅফিসিয়াল ফোন কেনার আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো, এর ওয়ারেন্টি এবং ফোনটি আসল কি না, তা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে নেবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি সবসময় চেষ্টা করি সর্বশেষ তথ্যটি আপনাকে দিতে। কিন্তু কেনার আগে, আমি আপনাকে দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করবো আপনার নিকটস্থ বাজার বা কোনো নির্ভরযোগ্য অনলাইন শপ থেকে ফোনটির বর্তমান দামটি অবশ্যই যাচাই করে নিতে।
আইটেল ভিশন ২: এক নজরে স্পেসিফিকেশন

দাম তো জানলেন। এখন দেখা যাক, এই টাকায় আইটেল আপনাকে কী কী দিচ্ছে। স্পেসিফিকেশনগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কারণ এর ওপরই নির্ভর করছে আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা কেমন হবে।
টেবিলের মাধ্যমে দেখলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে:
| ফিচার | স্পেসিফিকেশন |
| ডিসপ্লে | ৬.৬ ইঞ্চি HD+ IPS (ওয়াটারড্রপ নচ) |
| প্রসেসর | Unisoc SC9863A (অক্টা-কোর, ২৮ ন্যানোমিটার) |
| র্যাম | ২ জিবি / ৩ জিবি |
| রম | ৩২ জিবি |
| পেছনের ক্যামেরা | ১৩ মেগাপিক্সেল (প্রধান) + ২ মেগাপিক্সেল (ম্যাক্রো) + AI লেন্স |
| সামনের ক্যামেরা | ৮ মেগাপিক্সেল |
| ব্যাটারি | ৪০০০ mAh |
| চার্জিং | ১০ ওয়াট (বক্সের সাথে) |
| অপারেটিং সিস্টেম | অ্যান্ড্রয়েড ১০ (গো এডিশন) |
| নিরাপত্তা | ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর (পেছনে), ফেস আনলক |
আইটেল ভিশন ২: ভালো দিক বা সুবিধা
কাগজে-কলমে তো অনেক কিছু দেখা গেলো। কিন্তু আসল ব্যবহারে এর ভালো দিকগুলো কী? চলুন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি:
- বড় ডিসপ্লে: প্রথমেই যে বিষয়টি আপনার চোখে পড়বে তা হলো এর বিশাল ৬.৬ ইঞ্চির ডিসপ্লে। যদিও এটি একটি HD+ রেজুলেশনের প্যানেল, এই দামে ইউটিউবে ভিডিও দেখা বা ফেসবুক ব্রাউজ করার জন্য এটি এক কথায় চমৎকার। স্ক্রিনটি বেশ উজ্জ্বল, তাই ঘরের ভেতরে ব্যবহারে কোনো সমস্যাই হয় না।
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি: দেখুন, আমরা যারা কম বাজেটে ফোন কিনি, আমাদের প্রধান চাহিদা থাকে ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ। এখানে আইটেল হতাশ করেনি। ৪০০০ mAh ব্যাটারি দিয়ে, আপনি যদি সাধারণ ব্যবহারকারী হন (যেমন কল, ফেসবুকিং, মেসেজিং), তবে অনায়াসে একদিন পার করে দিতে পারবেন। এটি এই ফোনের একটি বড় প্লাস পয়েন্ট।
- স্টাইলিশ ডিজাইন: সত্যি বলছি, প্রথমবার হাতে নিলে মনেই হবে না এটি এত কম দামি একটি ফোন। এর পেছনের প্লাস্টিক বডিটা বেশ গ্লসি এবং এর ক্যামেরা মডিউলের ডিজাইনটা বেশ আধুনিক। এটি দেখতে প্রিমিয়াম না হলেও, অবশ্যই ‘চিপ’ বা সস্তা দেখতে লাগে না।
আইটেল ভিশন ২: দুর্বল দিক বা অসুবিধা
একটি সৎ রিভিউ দেওয়ার জন্য শুধু ভালো দিক বললেই চলে না। এই ফোনটি কিনলে আপনাকে কিছু বিষয়ে আপোস করতেই হবে, যা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এই বিষয়গুলো জানা থাকলে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে:
- দুর্বল প্রসেসর (পারফর্ম্যান্স): সত্যি বলতে, এটিই এই ফোনের সবচাইতে দুর্বল দিক। এতে ব্যবহৃত Unisoc SC9863A প্রসেসরটি শুধু বেসিক কাজের জন্য তৈরি। আপনি যদি একসাথে কয়েকটি অ্যাপ খোলেন বা একটু ভারী অ্যাপ (যেমন ফেসবুকের মূল অ্যাপ) ব্যবহার করেন, ফোনটি লক্ষণীয়ভাবে ধীর বা ‘ল্যাগ’ করতে পারে। গেমিংয়ের কথা তো বাদই দিলাম।
- অ্যান্ড্রয়েড গো এডিশন: ফোনটিতে দেওয়া হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ১০ (গো এডিশন)। এটি হালকা কাজের জন্য ভালো, কারণ এটি কম র্যাম ব্যবহার করে। কিন্তু এর মানে হলো, আপনি ফুল ভার্সন অ্যান্ড্রয়েডের সব ফিচার বা স্মুথনেস এখানে পাবেন না। আপনাকে অনেক অ্যাপের ‘গো’ ভার্সন (যেমন ইউটিউব গো, জিমেইল গো) ব্যবহার করতে হবে, যা অনেকেরই ভালো লাগে না।
- স্লো চার্জিং: ব্যাটারি বড় হলেও, বক্সে থাকা ১০ ওয়াটের সাধারণ চার্জার দিয়ে এই ৪০০০ mAh ব্যাটারি ফুল চার্জ হতে প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো বা তারও বেশি সময় লেগে যায়। যা এই সময়ে বেশ ধীর।
- ক্যামেরা শুধু ‘নামকাওয়াস্তে’: ১৩ মেগাপিক্সেল শুনে ভালো মনে হলেও, বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন। দিনের পর্যাপ্ত আলোতে ছবি মোটামুটি চলনসই আসে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার মতো। কিন্তু আলো একটু কমলেই বা রাতে ছবির মান খুবই সাধারণ। ক্যামেরা থেকে খুব বেশি আশা না করাই ভালো।
এই দামে আইটেল ভিশন ২ কাদের জন্য?
এতকিছু পর এখন প্রশ্ন হলো, এই ফোনটি কি আপনার কেনা উচিত? দেখুন, আমি সরাসরি বলছি:
যাদের জন্য এই ফোনটি ভালো:
আপনি যদি প্রথমবার স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হন, অথবা আপনার বাবা-মা বা বাসার বয়স্ক কাউকে শুধু কল করা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা বা ইমো/ হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলার জন্য একটি ফোন কিনে দিতে চান, তবে এই বাজেটে এটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে। একটি সেকেন্ডারি ফোন হিসেবেও এটি দুর্দান্ত।
যাদের জন্য এই ফোনটি নয়:
কিন্তু, আপনি যদি একজন ছাত্র হন, আপনাকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস বা মাল্টিটাস্কিং করতে হয়, অথবা আপনি টুকটাক গেম (যেমন ফ্রি ফায়ার) খেলতে চান। তবে আমি হাতজোড় করে বলবো দয়া করে এই ফোনটি কিনবেন না। আপনি হতাশ হবেন। ভালো ক্যামেরা বা দ্রুত পারফর্ম্যান্স আশা করলেও এটি আপনার জন্য নয়।
আইটেল ভিশন ২ এর বিকল্প ফোন
আপনি যদি আইটেল ভিশন ২ এর পারফর্ম্যান্সে সন্তুষ্ট না হন, তবে এই বাজেটে বা সামান্য কিছু টাকা যোগ করে বাজারে আরও কিছু বিকল্প দেখতে পারেন। যেমন:
- Symphony Z Series: সিম্ফনির কিছু মডেলে এই দামে প্রায় একই বা সামান্য ভালো স্পেসিফিকেশন পাওয়া যেতে পারে।
- Walton: দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনেরও কিছু ভালো বাজেট ফোন রয়েছে যা আপনি যাচাই করে দেখতে পারেন।
- Tecno Spark (Low-end): যদি বাজেট ১-২ হাজার টাকা বাড়াতে পারেন, তবে টেকনো বা ইনফিনিক্সের কিছু এন্ট্রি-লেভেল মডেল দেখতে পারেন, যা এর চেয়ে কিছুটা ভালো পারফর্ম্যান্স অফার করে।
শেষ কথা
পুরো আলোচনা শেষে আমরা একটা বিষয়ে একমত হতে পারি যে, ‘আইটেল ভিশন ২ দাম কত’ – এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো, দাম হিসেবে এটি একটি ‘বেসিক’ স্মার্টফোন। এর বড় ডিসপ্লে এবং ভালো ব্যাটারি লাইফ এর প্রধান শক্তি, কিন্তু এর দুর্বল পারফর্ম্যান্সকে উপেক্ষা করা যায় না।
আমার চূড়ান্ত মতামত হলো: আপনার বাজেট যদি কোনোভাবেই ৮,০০০ টাকা পার না হয় এবং আপনার চাহিদা শুধু কথা বলা আর ভিডিও দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবেই এই ফোনটি কেনার কথা ভাবতে পারেন। অন্যথায়, আমি পরামর্শ দেবো, একটু ধৈর্য ধরে বাজেট বাড়িয়ে অন্য কোনো ফোনের দিকে যাওয়াই আপনার জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো সিদ্ধান্ত হবে।
আইটেল ভিশন ২ নিয়ে আরও কিছু সাধারণ প্রশ্ন যা মানুষ প্রায়ই করে থাকে:
- প্রশ্ন ১: আইটেল ভিশন ২ কি গেমিংয়ের জন্য ভালো?
- উত্তর: এক কথায়, না। এর প্রসেসর খুবই দুর্বল। এটি দিয়ে ফ্রি ফায়ারের মতো গেমও ঠিকমতো খেলা যায় না, অনেক ল্যাগ করে। গেমিংয়ের জন্য এই ফোন মোটেও নয়।
- প্রশ্ন ২: আইটেল ভিশন ২ এর ক্যামেরা কেমন?
- উত্তর: দাম হিসেবে ঠিকঠাক। দিনের ভালো আলোতে সাধারণ ছবি তোলার জন্য কাজ চালানো যায়। তবে আলো কমলে বা রাতে ছবির মান একদমই ভালো হয় না।
- প্রশ্ন ৩: আইটেল ভিশন ২ এর ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন?
- উত্তর: এর ব্যাটারি পারফর্ম্যান্স বেশ ভালো। ৪০০০ mAh ব্যাটারি হওয়ায় আপনি যদি সাধারণ ব্যবহারকারী হন (কল, ফেসবুক, ইউটিউব), তবে অনায়াসে একদিন পুরো পার করে দিতে পারবেন।
এই পোস্টটি আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করলে আমি খুশি হব। আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্টে জানাতে পারেন।
আইফোন ১১ দাম বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।